ম্যাচের শুরুতে টসে জিতে ব্যাটিং করে রানের পাহাড় গড়েছে বাংলাদেশ। তামিমের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি ও ইমরুলের ফিফটিতে ভর করে নয় উইকেটে ৩৪১ রান করে বাংলাদেশ।তামিম ইকবাল ৯৩ বলে নয়টি চার ও চারটি ছয়ের সাহায্যে ১০২ রান করেন।

ইমরুলের ব্যাট থেকে আসে ৬২ বলে ৬১ রানের ঝলমলে ইনিংস। টাইগারদের হয়ে রান পেয়েছেন মুশফিকও।সাকিব, রিয়াদ ও মোসাদ্দেক দ্রুত দুই অংকের ঘরে পৌঁছে ইনিংস লম্বা করতে পারেনি। তবে শেষের দিকে ছোট ছোট ইনিংসে ভর করে বড় পুঁজি দাঁড় করায় বাংলাদশ।

পাকিস্তানের হয়ে দিনের সফল বোলার ছিলেন পেসার জুনায়েদ খান। চার উইকেট শিকার করেন তিনি। এছাড়া লেগ স্পিনার সাদাব খান নেন দুটি উইকেট। লিস্ট এ স্বীকৃত এই ম্যাচে জয় পেতে ৩৪২ রানের কঠিন লক্ষ্য পাড়ি দিতে হতো পাকিস্তানকে।

বড় স্কোর তাড়া করতে গিয়ে শুরুটা ভালো হওয়া দরকার ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু টাইগার ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ সেটা হতে দিলেন না। পাক ইনিংসের চতুর্থ ওভারে এসেই ওপেনার আজহার আলিকে সাজঘরে ফেরান তিনি।

ঠিক পরের ওভারে আরেকবার পাক ক্যাম্পে আঘাত হানেন কাপ্তান মাশরাফি। সদ্য ক্রিজে আসা বাবর আজমকে ১ রানে কিপার মুশফিকের গ্লাভস বন্ধী করেন মাশরাফি।দুই উইকেট হারালেও আরেক ওপেনার শেহজাদ আগ্রাসী ব্যাটিং চালিয়ে যান। বিশেষ করে পেসার তাসকিনের বিপক্ষে দ্রুত রান তুলতে থাকেন তিনি।

কিন্তু ব্যক্তিগত ৪৪ রানে টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের বলে বোল্ড হন শেহজাদ।শেহজাদ ফিরে যাওয়ার পর মোহাম্মদ হাফিজ ও শোয়েব মালিকের ব্যাটে রান তুলতে থাকে পাকিস্তান। এই দুই অভিজ্ঞ পাকিস্তানী মিলে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৭৯ রান যোগ করেন।

কিন্তু দলের রান দেড়শোর উপরে যাওয়ার পর ব্যক্তিগত ৪৯ রানে শফিউল ইসলামের প্রথম শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ হাফিজ। ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন হাফিজ।

হাফিজ না পারলেও মালিক অবশ্য অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন। হাফিজের বিদায়ের পর অধিনায়ক সরফরাজ ক্রিজে নেমে দলের পক্ষে প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। দলীয় ১৬৮ রানের মাথায় পাঁচ রান করে মোসাদ্দেক হোসেনের বলে সানজামুল ইসলামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।পাক দলপতি সরফরাজ উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলেও সাত নম্বরে নামা অলরাউন্ডার ইমাদ ওয়াসিমকে সঙ্গে নিয়ে আবারও দলের হাল ধরেন মালিক।

এই দুইজন মিলে দলের রান দুইশোর উপরে নিয়ে যান।কিন্তু মেহেদি হাসান মিরাজ বোলিংয়ে এসেই পাকিস্তান শিবিরে আঘাত করেন। উইকেটে থিতু হয়ে খেলতে থাকা শোয়েব মালিকের উইকেট তুলে নেন এই স্পিনার।

৭২ রান করে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ আউট হন মালিক। মালিককে ফিরিয়েই থেমে যাননি মিরাজ। তরুণ শাদাব খানকে ব্যক্তিগত ৭ রানে রান আউট করেন মিরাজ।

এর খানিক পর আবারও পাকিস্তান শিবিরে আঘাত হানেন এই তরুণ। দলীয় ২৪৯ রানে ইমাদ ওয়াসিমকে নিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত করেণ করেন এই ডানহাতি। ইমাদ ফেরেন ৪৫ রান করে।

কিন্তু ম্যাচের রোমাঞ্চ তখনও শেষ হয়নি। মুদ্রার উল্টো পীঠটা তখনও দেখা হয়নি মাশরাফিদের। ব্যাট করতে নামা ফাহিম আশরাফ এবং হাসান আলী টাইগার বোলারদের উপর হুট করে চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন।

টাইগার বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে অর্ধশতক তুলে নেন ফাহিম। তার সঙ্গী হাসান আলীও অপরপ্রান্ত থেকে রান তুলতে থাকেন। ম্যাচের মোড় গড়ায় শেষ ওভার পর্যন্ত। শেষ ওভারে পাকিস্তানের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৩ রান।

মাশরাফি বোলিংয়ে এলে প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানকে জয়ের কাছে নিয়ে যান ফাহিম। ঠিক তার পরের বলে ফাহিমের ব্যাট থেকে আসে তিন রান। তখনও পাকিস্তানের জয়ের জন্য প্রয়োজন ৪ বলে ৪ রান।

মাশরাফির ওভারের তৃতীয় বলে হাসান আলী বাউন্ডারি হাঁকিয়ে পাকিস্তানকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ২ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের হয়ে ফাহিম আশরাফ নবম উইকেট জুটিতে ৪৭ বলে ৯৩ রান যোগ করেন। ফাহিম আশরাফ ৬৪ এবং হাসান আলী ২৭ রান নিয়ে ক্রিজে টিকে থাকেন। বাংলাদেশের পক্ষে মিরাজ দুইটি এবং মাশরাফি, তাসকিন, মোসাদ্দেক, শফিউল এবং সাকিব একটি করে উইকেট শিকার করেন।

বাংলাদেশ স্কোয়াড:

তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), সাকিব আল হাসান, সাব্বির রহমান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মাশরাফি মর্তুজা (অধিনায়ক), মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, সানজামুল ইসলাম, মেহেদী হাসান ও শফিউল ইসলাম।

পাকিস্তান স্কোয়াড:

আহমেদ শেহজাদ, আজহার আলী, সরফরাজ আহমেদ (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), বাবর আজম, ফাহিম আশরাফ, ফাখার জামান, হাসান আলী, ইমাদ ওয়াসিম, জুনায়েদ খান, মোহাম্মদ আমির, মোহাম্মদ হাফিজ, শাদাব খান, শোয়েব মালিক, উমর আকমল ও ওয়াহাব রিয়াজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.