
জনপ্রিয় একটি খেলা ক্রিকেট। এই ক্রিকেট কখনো হাসায়, কখনো কাঁদায়, আবার মূহুর্তেই বদলে দেয় অনেকের জীবন। গৌরবময় ও অনিশ্চয়তার এই খেলায় সুনিশ্চিত নয় কোন কিছুই। আজকের হিরো হয়ে যায় আগামীকাল ভিলেন, বর্তমানে শূন্যে থাকা ক্রিকেটার ভবিষ্যতে হয়ে যান মহাতারকা, দেশসেরা খেলোয়ার। তেমনই এক ঘটনার জন্ম দিয়েছেন পাকিস্তানের ডানহাতি পেসার মোহাম্মদ আব্বাস।
সদ্য সমাপ্ত হওয়া লর্ডস টেস্টে আব্বাসের পেস বোলিং ঝড়ে মাত্র সোয়া তিন দিনেই পরাজিত হয় স্বাগতিক ইংল্যান্ড। দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ৬৪ রান খরচ করে ৮ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরষ্কারও জিতেছেন এই আব্বাস। ক্যারিয়ারে মাত্র ৭ টেস্ট খেলে শিকার করেছে ৪০ উইকেট। কিন্তু এতোটা সহজ ছিলো না আব্বাসের প্রাথমিক জীবন।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ঝাটকি গ্রামের এক সাধারণ বাসিন্দা ছিলেন আব্বাস। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা ছিল ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা কখনোই তাকে সুযোগ দেয়নি ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন দেখার। এমনকি পরিবারের আর্থিক অবস্থা পরিবর্তন করতে দেশ ছাড়ার কথাও ভাবছিলেন ২৮ বছর বয়সী এই পেসার। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের গল্প জানান আব্বাস।
আব্বাস বলেন, ‘আমার পরিবারে আমিই বড় সন্তান। তাই জীবিকান্বেষণে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনাও করেছিলাম একবার। তবে তখন আমার বন্ধুরা আমাকে বলেছিলো যে দেশের অবস্থা বদলাবে, এখানেই যেনো থেকে যাই।’ মূলত বন্ধুদের আশ্বাসের করণেই দেশে থেকে যান আব্বাস। কাজ খুঁজতে থাকেন দেশের ভেতরেই।
কোন উপায় না পেয়ে তিনি বাধ্য হয়ে কাজ নেন একটি চামড়া কারখানায়। সেখানে কাজ করেন ৮ মাস। পরে দুই বছর ভূমি অধিদপ্তরে জমির রেজিস্ট্রি বিষয়ক কাজে ছিলেন তিনি। আব্বাস বলেন, ‘শুরুতে আমি একটি চামড়া কারখানায় কাজ নেই, সেখানে ৮ মাস ছিলাম। পরে ২ বছর ভূমি অধিদপ্তরের অধীনে কোর্টের জমি রেজিস্ট্রি বিষয়ক কাজ করেছি। আমি কখনোই ক্রিকেট ছাড়ার কথা ভাবিনি।’
ক্রিকেটের প্রতি অগাধ ভালোবাসা এবং আত্মনিবেদনের জোরেই মূলত এখনের এই অবস্থানে আসতে পেরেছেন আব্বাস। কোর্টে কাজ করার সময় তার উকিল বন্ধুরা তাকে ক্রিকেট খেলতে সুযোগ দেয় এবং সেখানেই বাজিমাত করেন আব্বাস। তিনি বলেন, ‘জেলা অনুর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলাম আমি। আমার উকিল বন্ধুরা প্রথমে মানা করলেও, পরে ঠিকই আমাকে সুযোগ করে দেয় খেলার।’
সেই যে শুরু তার ক্রিকেট অধ্যায়ের, এরপর থেকে একের পর এক বাজিমাত করতে থাকেন আব্বাস। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট পেরিয়ে শিয়ালকোটের হয়ে সুযোগ পান পাকিস্তানের জনপ্রিয় ঘরোয়া টুর্নামেন্ট কায়েদ-এ-আজম ট্রফিতে। এই টুর্নামেন্টে পরপর দুই মৌসুমে ৬১ এবং ৭১ উইকেট নিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন ডানহাতি এই পেসার।
ফলে তাকে দলে নিতে দ্বিতীয়বার আর ভাবেনি ইনজামাম-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচক প্যানেল। আর সুযোগ পেয়ে এখনো পর্যন্ত ৭টি টেস্ট ম্যাচে ৪ বার নিয়েছেন ৪ উইকেট, ২ বার নিয়েছেন ৫ উইকেট। সবশেষে ঐতিহাসিক লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে জিতেছেন ম্যাচসেরার পুরষ্কার। চামড়া কারখানায় কাজ করার সময় তিনি নিশ্চয়ই হয়তো ভাবেননি এতোদূর যাবেন ক্রিকেটের হাত ধরে।
