
প্রথম টেষ্টের সারাদিন জুড়েই ছিল অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের আধিপত্য। শুরুতে বাংলাদেশের ক্যাম্পে আঘাত হানেন অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার কামিন্স। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেশনে বাংলাদেশ পড়ে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনারদের তোপের মুখে।
পুরো ইনিংসে পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটি মাত্র একটি। তা হলো পঞ্চাশতম টেস্ট খেলতে নামা সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের। দিনশেষে তারাই ছিল ব্যাতিক্রম! শেষ বিকেলে বিপর্যয় ছিল সফরকারীদের ব্যাটিংয়েও।
টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই বাংলাদেশের ইনিংসে প্রথম আঘাত। প্যাট কামিন্সের দারুণ ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন সৌম্য সরকার। স্কোরবোর্ডে রান তখন ১০। নিজের পরের ওভারে আবারো আঘাত হানেন কামিন্স। এবার জোড়া আঘাত।
পঞ্চম বলে অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল খেলতে গিয়ে উইকেট কিপারের হাতে ক্যাচ দেন ইমরুল কায়েস। পরের বল ছিল ইয়োর্কার। সাব্বিরের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল চলে যায় উইকেটের পেছনে থাকা ম্যাথু ওয়েডের গ্লাভসে। রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি সাব্বির রহমান। রান তখনো আটকে আছে দশেই। কামিন্স হ্যাট্রিকের সুযোগ পেলেও হয়নি।
এক সঙ্গে পঞ্চাশতম টেস্ট খেলতে নামা সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের দৃঢ় ব্যাটিং। সামাল দিলেন শুরুর ধাক্কা। কামিন্স আগাতে ভেঙ্গে যাওয়া ইনিংসকে গড়তে লাগলেন দুজন মিলে। কিছুটা দ্রুত রান তুলছিলেন সাকিব। তামিম খেলছিলেন দেখেশুনে। দুজনে মিলে ১৫৫ রানের জুটি গড়েন।
দলীয় ২৬৫ রানের মাথায় গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচ দেন তামিম। বলের বাড়তি বাউন্স সামাল দিতে পারেননি তামিম। ব্যাটে-বলে আগাত হয়নি ঠিকভাবে। ১৪৪ বলে ৭১ রানের ইনিংস খেলে সাজঘড়ে ফিরে যান এ বাঁহাতি ওপেনার। তার ইনিংসে ছিল ৫ চার ও ৩ ছক্কা।
এরপর অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে ২৩ রান যোগ করেন সাকিব। ৮৪ রান করে নাথান লায়নের বলে ক্যাচ দেন স্লিপে থাকা স্টিভ স্মিথের হাতে। ১৩৩ বলে ৮৪ রানের ইনিংস খেলেন সাকিব । ছিল না কোনো ছয়, চারের সংখ্যা ১১। ১৬ রানের আফসোস নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় সাকিবকে।
এরপর বেশিক্ষণ টিকেননি মুশফিকুর রহিম। ১৮ রান করে মুশফিক অ্যাগারের বলে কিছুটা সামনে এসে রক্ষ্মণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে গিয়ে হন এলবিডব্লিউ। রিভিউ নিলেও তা কাজে আসেনি।
সেখান থেকে লড়াই চালিয়ে যান মেহেদি হাসান মিরাজ এবং নাসির হোসেন। মাঝে কিছুক্ষণের জন্য বাধা হয়ে দাড়ায় বৃষ্টি। নাসির-মিরাজের জুটিতে বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ৬৯ বলের এ জুটি ৪২ রানের বেশি যোগ করতে পারেনি।
এ জুটি ভাঙেন লায়ন। ক্যাচ ধরেছিলেন হ্যান্ডসকম। যদিও টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল মিরাজের ব্যাট স্পর্শ করেনি। রিভিউ নিতে না পারায় সাজঘরে ফিরে যেতে হয় মিরাজকে।
দুই ওভার পরেই আউট হয়ে যান শেষ ভরসা হয়ে টিকে থাকা নাসির হোসেন। শেষদিকে শফিউলের ১৩ রানের সুবাদে ২৫০ রানের চৌকাঠ পার করে বাংলাদেশ। থামে ২৬০ রানে।
তিনটি করে উইকেট নেন নাথান লিয়ন, প্যাট কামিন্স ও অ্যাশটন অ্যাগার। একটি উইকেট পান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
৯ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পায় অস্ট্রেলিয়া। দিনের শেষে যেন ঘটে দিনের শুরুর পুনরাবৃত্তি। বাংলাদেশের টপ অর্ডারের মতোই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে সফরকারীদের ব্যাটিং লাইন।
প্রথম সাফল্য এনে দেন অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে মিরাজের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে ডেভিড ওয়ার্নার। ৮ রান করে সাজঘরে হাঁটেন ওয়ার্নার।
তিন নম্বরে ব্যাট করতে আসেন উসমান খাজা। পরের ওভারের প্রথম বলেই ১ রান করে রান আউট হয়ে ফিরে যান খাজা। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া।
নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামানো হয় নাথান লায়নকে। নাইটওয়াচম্যান নিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার রয়েছে এক দারুণ সুখস্মৃতি। ২০০৭ সালে নাইটওয়াচ ম্যান হিসেবে নামা জ্যাসন গিলিস্পি বাংলাদেশের বিপক্ষে হাঁকিয়ে বসেছিলেন ডাবল সেঞ্চুরি।
কিন্তু এবার আর নাইটওয়াচম্যান দিয়ে কাজ হলো না। খাজার বিদায় হওয়ার ওভারেই নাথান লায়নকে এলবিডব্লিউ করেন সাকিব আল হাসান।
ওপেনার ম্যাট রেনশকে এরপর সঙ্গ দেন অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। দিনশেষে তিন উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ১৮। স্টিভ স্মিথ ৩ ও ম্যাট রেনশ ৬ রান করে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশ এগিয়ে আছে ২৪২ রানে।
মোটেও ভালো অবস্থানে নেই অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের পুঁজিও অল্প। তাই প্রথম দিনশেষে চালকের আসনে বসানো যাচ্ছে না কোনো দলকেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ বাংলাদেশ ২৬০/১০, প্রথম ইনিংস
সাকিব আল হাসান ৮৪, তামিম ইকবাল ৭১, নাসির হোসেন ২৩, মেহেদি হাসান মিরাজ ১৮
অ্যাশটন অ্যাগার ৩/৪৬, প্যাট কামিন্স ৩/৬৩, নাথান লায়ন ৩/৭৯
অস্ট্রেলিয়া : ১৮/৩, প্রথম ইনিংস
ডেভিড ওয়ার্নার ৮, ম্যাট রেনশ ৬*, স্টিভ স্মিথ ৩*
সাকিব আল হাসান ১/৩, মেহেদি হাসান মিরাজ ১/৭
