
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আসরে ব্যাটে বলে হতাশ করেছেন বাংলাদেশ দলের তরুণ ক্রিকেটাররা। সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, মুস্তাফিজুর রহমান এরা কেউই নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেন নি।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সাফল্যযাত্রার শুরুটা শুরু হয়েছিলো মূলত ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ থেকে। এই সময় থেকে দুর্দান্ত খেলা বাংলাদেশ দলের র্যাঙ্কিংয়েও এর ছাপ পড়েছে।
উইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কাকে টপকে র্যাঙ্কিংয়ের ৭ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ।বাংলাদেশ দলের এই ধারাবাহিক সাফল্যে অবদান ছিলো তরুণ ক্রিকেটার ও অভিজ্ঞদের। আশা করা হচ্ছে এই তরুণ ক্রিকেটাররাই বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেবেন ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে।
জুনিয়র সিনিয়ররা জ্বলে ওঠার কারণেই ধারাবাহিক ভাবে দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ দল।তবে তরুণদের বর্তমান পারফরমেন্সই দুশ্চিন্তা জাগাচ্ছে সবার মনে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ দল টানা চারটি ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে দেশের মাটিতে।
কিন্তু গত দেড় বছরে বাংলাদেশ দল বেশির ভাগ খেলাই খেলেছে বিদেশে।ভিন্ন কন্ডিশন কিংবা প্রতিপক্ষের মাঠে সিনিয়ররা নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দুর্দান্ত খেলেছেন। কিন্তু এই পর্যায়ে নিজেদের প্রমাণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ তরুণ ক্রিকেটাররা।
এর প্রভাব পড়েছে পারফরম্যান্সেও।২০১৫ সালে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং গড় ছিলো ৩৩.৮৮ করে, গত দেড় বছরে সেটি দাঁড়িয়েছে ৩০.৪৪এ। তরুণ ক্রিকেটারদের ব্যাটিং গড় ২০১৫ সালে ছিলো ২০.২৪, আর এখন সেটি ১৭।অভিজ্ঞদের গড়ে অবশ্য খুব বেশি একটা পার্থক্য নেই।
২০১৫ সালে তাদের ব্যাটিং গড় ছিলো ২৭.৫৭ আর এখন সেটি দাঁড়িয়েছে ৩০.৪৪ এ। ব্যাটিং গড়ে অনেকটা পার্থক্য থাকলেও, সম্মিলিত সেঞ্চুরি কিংবা ফিফটি সংখ্যায় অবশ্য খুব একটা পার্থক্য নেই।২০১৫ সালে একটি সেঞ্চুরি এসেছিল তরুণ ক্রিকেটার সৌম্য সরকারের ব্যাট থেকে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে সেঞ্চুরিটি করেছিলেন সৌম্য। গত দেড় বছরে আর কোনো তরুণ ক্রিকেটার ছুঁতে পারেননি তিন অঙ্ক। অর্থাৎ লম্বা ইনিংস খেলতে ব্যর্থ তরুণেরা।পরিসংখ্যান হিসেব করলে দেখা যায়,
২০১৫ সালে বাংলাদেশ দলের সম্মিলিত সেঞ্চুরির সংখ্যা ৭ টি এর মধ্যে ১ টি এসেছে তরুণদের ব্যাট থেকে আর বাকি ৬ টি এসেছে অভিজ্ঞদের ব্যাট থেকে।আর, ২০১৬ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সম্মিলিত সেঞ্চুরির সংখ্যা ৬ টি।
যার প্রত্যেকটিই এসেছে অভিজ্ঞদের ব্যাট থেকে। তাছাড়া, ফিফটির পরিসংখ্যানেও খুব বেশি একটা পার্থক্য নেই।২০১৫ সালে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা সম্মিলিত ভাবে ২৫ টি ফিফটি করেছেন এর মধ্যে অভিজ্ঞরা করেছেন ১৮ টি ফিফটি আর তরুণদের ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৬ টি ফিফটি।
২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৫ টি ফিফটি করেছে টাইগার ক্রিকেটাররা। এর মধ্যে ১৮ টি এসেছে অভিজ্ঞদের ব্যাট থেকে আর বাকি ৭ টি এসেছে তরুণ টাইগারদের ব্যাট থেকে।২০১৫* অভিজ্ঞ : মুশফিক, তামিম, মাহমুদউল্লাহ, সাকিব, নাসির, ইমরুল, মাশরাফি, রুবেল ও মুমিনুল।
তরুণ : সৌম্য, সাব্বির, লিটন, এনামুল, সানি, মোস্তাফিজ, তাসকিন, আল আমিন, জুবায়ের।২০১৬ জানু-২০১৭ জুন* অভিজ্ঞ : তামিম, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক, ইমরুল, মাশরাফি, নাসির, মোশাররফ, রুবেল ও শফিউল।** তরুণ : সাব্বির, মোসাদ্দেক, সৌম্য, মিরাজ, নুরুল, তাসকিন, তাইজুল, তানভীর, মোস্তাফিজ, শুভাশিস।
২০১৫ সালের তুলনায় গত দেড় বছরে ব্যাটিংয়ে তরুণদের ছন্দপতন হলেও বোলিংয়ে অভিজ্ঞ–তরুণ দুইয়েরই বেশ অবনতি হয়েছে। বোলিং গড়ের সাথে বেড়েছে ইকোনমিও। ২০১৫ সালে যেখানে চারবার ৫ উইকেট পেয়েছেন টাইগার বোলাররা, সেখানে গত দেড় বছরে ৫ উইকেটের দেখাই পাননি মাশরাফি–মোস্তাফিজরা।
২০১৫ সালে ওয়ানডেতে টাইগারদের দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের মূলে ছিলো অভিজ্ঞদের সঙ্গে তরুণদের তাল মিলিয়ে ভালো পারফরমেন্স। পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যায় ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বোলাররা যে চারবার ৫ উইকেট পেয়েছিলেন, এর তিনটি তরুণরা নিয়েছিলেন।
ওই বছর জুনে ভারতের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। গত দেড় বছরে অভিজ্ঞরা নিজেদের অভিজ্ঞতা অনুসারে পারফরমেন্স করতে পারেননি। কিন্তু তার চেয়েও বেশি খারাপ করেছেন তরুণেরা।
২০১৫ সালে তরুণদের উইকেটপ্রতি খরচ হয়েছে ৩৪.৮৭ রান, এখন সেটি দাঁড়িয়েছে ৪১.৭৩ এ। ২০১৫ সালে তরুণদের ইকোনোমি ছিলো যেখানে ৪.৯৭ সেটি এখন ৫.২০ এ।আর অভিজ্ঞরা ২০১৫ সালে উইকেট প্রতি খরচ করেছিলেন ৩৮.০৫ আর এখন সেটি ৩৮.৭৯ তে।
অভিজ্ঞদের ইকোনোমিও বেড়েছে। ২০১৫ সালে যেটা ছিলো ৪.৯৭ এখন সেটি ৫.২০।* অভিজ্ঞ : সাকিব, মাশরাফি, রুবেল, নাসির ও মাহমুদউল্লাহ।** তরুণ : মোস্তাফিজ, তাসকিন, আরাফাত, আল আমিন ও সাব্বির।
২০১৬ জানু-২০১৭ জুন* অভিজ্ঞ : মাশরাফি, সাকিব, রুবেল, শফিউল, নাসির ও মোশাররফ হোসেন।** তরুণ : মোস্তাফিজ, তাসকিন, মোসাদ্দেক, মিরাজ, সানজামুল, সাব্বির, শুভাশিস ও তাইজুল।
২০১৫ সালে ঘরের মাঠে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করে ম্যাচসেরার পুরষ্কার হাতে তুলতে লড়াই করতে হয়েছে তরুণ ও অভিজ্ঞদের। ২০১৫ সালে ৭ বার অভিজ্ঞরা ম্যাচ সেরা হয়েছেন আর তরুণরা হয়েছেন ৫ বার।আর ২০১৬ সালের শুরু থেকে অভিজ্ঞদেরই রাজত্ব চলছে, তারা ম্যাচ সেরা হয়েছেন ৬ টিতে আর তরুণরা মাত্র ১ টিতে।
এদিকে, সিরিজসেরার পুরস্কার হাতে তোলায় তরুণদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে অভিজ্ঞদের।২০১৫ সালে ২ বার করে সিরিজ সেরা হয়েছেন তরুণ ক্রিকেটাররা। আর ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ১ বার সিরিজ সেরা হয়েছেন অভিজ্ঞরা আর কোনো সিরিজে সিরিজ সেরার পুরষ্কার জেতেননি তরুণরা।
