
২০০৭-০৮ মৌসুমে লা লিগা জেতায় ২০০৮ স্প্যানিশ সুপার কাপে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় রিয়াল মাদ্রিদ, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল সে মৌসুমের স্প্যানিশ কিংস কাপ (বর্তমান কোপা ডেল রে) জয়ী ভ্যালেন্সিয়া।২০০৮ সালের ১৭ আগস্ট মেস্তায়া স্টেডিয়ামে প্রথম লেগে মুখোমুখি হয় দুই দল।
ডাচ স্ট্রাইকার রুড ফন নিস্টলরয় ১৩ মিনিটে গোল করে রিয়ালকে এগিয়ে দিলেও ৫৫ মিনিটে হুয়ান মাতা ও ৫৮ মিনিটে ডেভিড ভিয়ার গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ৬৭ মিনিটে নিস্টলরয় তার দ্বিতীয় গোল করে রিয়ালকে সমতায় ফেরালেও ৮০ মিনিটে ভিসেন্তের জয়সূচক গোলে ৩-২ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ভ্যালেন্সিয়া।
এক সপ্তাহ পর ২৪ আগস্ট নিজেদের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ফিরতি লেগে মাঠে নামে রিয়াল মাদ্রিদ। মাদ্রিদিস্তাদের বিশ্বাস ছিল খেলোয়াড়েরা ঠিকই প্রথম লেগের পরাজয় ভুলিয়ে দেবেন নিজেদের পারফরম্যান্স দিয়ে। কিন্তু ৩২ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ডেভিড সিলভার মাটি কামড়ানো কোনাকুনি শটের গোলে ভ্যালেন্সিয়া এগিয়ে যায়।
পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যায় ৫ মিনিট পরে যখন ভ্যালেন্সিয়ার স্প্যানিশ মিডফিল্ডার হুয়ান মাতাকে করা এক বাজে ফাউলে রিয়ালের তখনকার নতুন সাইনিং রাফায়েল ফন ডার ভার্ট সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ থেকে বহিষ্কার হন।প্রথমার্ধ ওভাবেই শেষ হওয়ায় হাফ টাইমে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে ২-৪ গোলে পিছিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ।
একজন কম নিয়ে খেলা ১০ জনের রিয়ালকে অন্তত প্রয়োজন ২ গোল। দ্বিতীয়ার্ধে তাই সেবারের লিগ জেতা রিয়ালকে তাই করতে হতো বিশেষ কিছু। ৫০ মিনিটে ভ্যালেন্সিয়ার ডিফেন্ডার রাউল আলবিওল ডি-বক্স এরিয়ার ভেতর হ্যান্ডবল করলে পেনাল্টি পায় রিয়াল মাদ্রিদ। প্রথম লেগে জোড়া গোল করা নিস্টলরয় স্পটকিক থেকে লক্ষ্যভেদ করে সমতায় ফেরান রিয়ালকে।
অ্যাগ্রিগেটে ২-৩ গোলে পিছিয়ে থাকা রিয়ালের ম্যাচে ফিরতে প্রয়োজন আর ১টি গোল। কিন্তু ৭২ মিনিটে ভ্যালেন্সিয়া মিডফিল্ডার রুবেন বারাজাকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড (লাল কার্ড) দেখে মাঠ ছাড়েন নিস্টলরয়। যদিও টিভি রিপ্লে বারবার দেখাচ্ছিল যে ডাচ স্ট্রাইকারের করা ট্যাকেলটি ছিল সঠিক ও নির্ভুল।
প্রথমার্ধে একজন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার এবং দ্বিতীয়ার্ধে দলের মূল স্কোরিং স্ট্রাইকার মাঠ ছাড়ায় ৯ জনের দল নিয়ে রিয়ালের পক্ষে ম্যাচে ফেরা ছিল বেশ কঠিন একটা কাজ।কথিত আছে চাপের মুখে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের ভয়ংকর কোন দল আর দ্বিতীয়টি নেই। স্টেডিয়ামে উপস্থিত ৬০ হাজার মাদ্রিদিস্তার সঙ্গে গোটা বিশ্ব আরো একবার সেটির সাক্ষী থাকলো ম্যাচের বাকি সময়টায়।
৭৬ মিনিটে কর্ণার থেকে ঘানাইয়ান মিডফিল্ডার মোহাম্মাদু দিয়ারার হেড পোস্টে লেগে ফিরে এলে ফিরতি শটে গোল করে রিয়ালকে ম্যাচে ফেরান ডিফেন্ডার সার্জিও রামোস। অ্যাগ্রিগেটে ৩-৩ সমতা থাকলেও অ্যাওয়ে গোলের সুবিধায় তখন রিয়ালই এগিয়ে। কিন্তু ২ জন কম নিয়ে রিয়াল কতক্ষণ এই সুবিধা রাখতে পারে তা ছিল দেখার বিষয়।
রিয়াল মাদ্রিদের তৎকালীন কোচ বার্নড সুস্টার এরপরে মারলেন একটা বড় বাজি। রামোসের গোলের পরপরই গুতি হার্নান্দেজের বদলে ডে লা রেড ও অধিনায়ক রাউল গঞ্জালেসের পরিবর্তে গঞ্জালো হিগুয়েইনকে মাঠে নামালেন। সুস্টারের ফাটকাটা লেগেও যায় ৮৬ মিনিটে দূরপাল্লার শট থেকে ডে লা রেড ও ৮৯ মিনিটে ভ্যালেন্সিয়া গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে হিগুয়েইন গোল করলে।
৯০ মিনিটে সাবেক মাদ্রিদিস্তা স্ট্রাইকার ফার্নান্দো মরিয়েন্তেস ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে গোল করলেও আদতে শেষ পর্যন্ত তা ব্যবধান কমানো ছাড়া আর কোন কাজে আসেনি।প্রথম লেগে ২-৩ গোলের পরাজয়ে পিছিয়ে থেকে আর দ্বিতীয় লেগে ২ জন কমে ৯ জনের নিয়েও ৪-২ গোলের জয়ে দুই লেগ মিলিয়ে
অ্যাগ্রিগেটে ৬-৫ গোলের অগ্রগামিতায় ২০০৮ সালের সুপার কোপা ডে এস্পানা জিতে রিয়াল মাদ্রিদ। খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে এটিই ছিল রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ক্লাবের মুকুটবিহীন সম্রাট রাউল গঞ্জালেসের সর্বশেষ শিরোপা জয়।
