বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক অর্জন মোহাম্মদ আশরাফুলের ব্যাটে, এ ব্যাপারে সন্দেহ নাই। তা অস্বীকার করতে পারেন কেবল স্মৃতিভ্রম আর অকৃতজ্ঞ মানুষেরা।

তার প্রতিভার কমতি নাই, কিন্তু সবচে বড় সমস্যা ধারাবাহিকতায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার বলা হয়ে থাকে তাকেই। তার ব্যাটেই বাংলাদেশ তার সোনালী অতীত রাঙিয়ে এবং বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তিতে পরিণত হচ্ছে।

আশরাফুল এবং ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মতুর্জা প্রায় একই সময়ে খেলা শুরু করলেও ফিক্সিং কেলেংকারির দায় মাথায় নিয়ে ক্রিকেট থেকে ৩ বছর নিষিদ্ধ ছিলেন আশরাফুল।

মাশরাফি এখনো খেলে গেলেও আশরাফুল কি আদৌ জাতীয় দলে আবার ফিরতে পারবেন। এক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্রিকেট ভক্তদের মতই হচ্ছে, তিনি পারবেন না আবার জাতীয় দলে ফিরতে।

আশরাফুলকে নিয়ে এত কথা বলার মানে হচ্ছে, আমরা কিছু আশাবাদী মানুষ, যারা এই দেশের ক্রিকেটের বরপুত্র আশরাফুলের ব্যাটিং আবারো দেখতে চাই তারা বলছি, আশরাফুলের মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটাররা হারিয়ে যেতে পারেন না।

২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট সবচে মধুরতম সময় পার করছে। চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলার কৃতিত্ব দেখিয়েই মাশরাফিররা।

তবে পুরো সিরিজে বাংলাদেশের দুঃখের কারণ ছিল ৩ নম্বর ব্যাটসম্যানদের চরম ব্যর্থতা। এরি মধ্যে সাব্বির রহমানকে অনেক সুযোগ দেয়া হয়েছে।

তাকে আবারো ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে প্রমাণ করেই ফিরতে হবে জাতীয় দলে। এমন ঘোষণাও দিয়েছিলেন বাংলাদেশের সাবেক কোচ চন্দিকা হাতুরেসিংহে। পরে সাব্বিরের বিকল্প হিসাবে ৩ নম্বরে ওপেনার হিসাবে খেলা ইমরুল কায়েসকে চেষ্টা করা হলেও তিনিও ব্যর্থ হয়েছে।

একটা বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, ক্রিকেটে ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বর জায়গাটা সাধারণত দলের সেরা ব্যাটসম্যানের জন্য বরাদ্দ থাকে। এই সময়ে বিরাট কোহলি, স্টিভেন স্মিথ, জো রুট, কেন উইলিয়ামসন—সবাই ব্যাটিং করেন তিনে।

একটা সময় জায়গাটা ছিল ভিভ রিচার্ডস, ব্রায়ান লারা, কুমার সাঙ্গাকারা, রিকি পন্টিং, জ্যাক ক্যালিস, রাহুল দ্রাবিড়, মারভান আতাপাত্তুর মতো কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানদের অধিকারে।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একসময় টেস্টে তিন নম্বরে হাবিবুল বাশার সফল হলেও ওয়ানডেতে জায়গাটা নিয়ে সব সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে, যেটি এখনো হচ্ছে।

৫০ ওভারের ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ৩৩ ব্যাটসম্যান ব্যাটিং করেছেন এই পজিশনে। এঁদের মধ্যে যা একটু সফল আফতাব আহমেদ। তিন নম্বরে নেমে তিনিই একমাত্র এক হাজারের বেশি রান করেছেন।

এখানে ব্যাটিং করে ৫৪ ম্যাচে আফতাবের রান ১৩০৩। ৫২ ম্যাচে ৯৮৪ রান করে এই তালিকায় দুই নম্বরে আছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। যেহেতু আফতাব আহমেদ ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে কোচিংয়ে মনোযোগী হয়েছেন, সেক্ষেত্রে আশরাফুলকে একবার সুযোগ দেয়া যেতেই পারে।

তিন নম্বর ব্যাটিং পজিশন একটা দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটি বলছিলেন আফতাব,

‘ওপেনার দ্রুত আউট হলে তিন নম্বরের ব্যাটসম্যানকে ওপেনারের ভূমিকা পালন করতে হয়। কিন্তু এই পজিশনে নামা ব্যাটসম্যানও যদি দ্রুত ফিরে যায়, দল চাপে পড়ে যায়। মিডল অর্ডারকে দ্রুত চাপে না ফেলতে তিনের ব্যাটসম্যানকে ভালো করাটা জরুরি। কোহলিকে দেখেন। উইকেটে থাকছে, ইনিংস লম্বা করছে। আবার শটও খেলছে। দক্ষতা ও ধৈর্যের সমন্বয়ে একজন দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান তিনে আমরা দেখছি না।’

তিন নম্বর ব্যাটিং পজিশনে ব্যর্থ হলে সেটি ম্যাচের ফলে কতটা প্রভাব পড়তে পারে, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ ভালোভাবে সেটি বুঝেছে। সমস্যাটা ভাবাচ্ছে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে বিসিবির নির্বাচক হাবিবুলকেও,

‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ২০১৯ বিশ্বকাপে যেতে হবে। ভবিষ্যতে তিনে কে ব্যাটিং করবে, আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। জাতীয় দলের বাইরেও সমস্যাটা থেকে গেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক ওপেনারের নাম বলতে পারবেন। কিন্তু তিনে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে, এমন কজন ব্যাটসম্যানের নাম বলতে পারবেন? আমরা ওপেনারদের দিয়ে তিন নম্বরের কাজ চালাচ্ছি। এটাই রীতি হয়ে যাচ্ছে।’

শেষ কথা হচ্ছে, আশরাফুলের মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটার নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরেছেন। সর্বশেষ ঘরোয়া টুর্নামেন্টে মোটামুটি ভালো ব্যাটিং করেছেন তিনি। দুইটি অর্ধশতকও পেয়েছেন। এই বছর সকল নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ফিরবেন তিনি।

বয়স ৩২ হলেও একজন ব্যাটসম্যানের জন্য ৪৩ বছর ক্রিকেট খেলে যাওয়ার নজির স্থাপন করে সদ্য অবসর নিয়েছেন পাকিস্তানের মিসবাহ উল হক। সেক্ষেত্রে আমরা বলতেই পারি, আশরাফুলের তেমন কোনো বয়সই হয়নি।

আশরাফুল মনে করেন তেমনটা। নিজেকে ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রমাণ করেই তিনি আবার জাতীয় দলে ফিরতে চান। এক্ষেত্রে ক্রিকেট বোর্ডের আন্তরিক সহযোগিতাও প্রয়োজন।