রাশিয়া বিশ্বকাপের কোয়াটার ফাইনালে বেলজিয়ামের মুখমুখি হয় ব্রাজিল। এই ম্যাচে বেলজিয়ামের কাছে ২-১ গোলে পরাজিত হয় পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান্সরা। তবে ম্যাচ শেষে অনেক সেলেকাও সমর্থকেরই এই পরাজয় মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। কষ্ট হওয়ার কারণ হলো দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলকে পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত করে।

প্রথম আর্ধে বিরতি শেষ হওয়ার দশ মিনিটের মাথায় বেলজিয়াম ডি-বক্সে ভিতর গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে মারাত্মক একটি ট্যাকল করে বসেন। যখন তার ধারে-কাছেও বল ছিল না। তখন অধিকাংশ মানুষই সেটিকে ফাউল বলে ধরে নেয়। সেই সময় অনেকে ভেবেছে পেনাল্টি পেতে যাচ্ছে ব্রাজিল। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, পেনাল্টি দেয়া হয়নি ব্রাজিলকে!

এই ঘটনার পর বেলজিয়ামের খেলোয়াররা দ্রুত গোল-কিক নিতে যায়। যাতে খেলা শুরু হয়ে যায় আর রেফারি ভিএআরের মাধ্যমে ঘটনাটি রিভিউ করতে না পারেন। কিন্তু রেফারি মিলোরাদ মাজিচ কিছু খনের জন্য খেলা থামিয়ে দেন এবং ইয়ারপিসের মাধ্যমে ভিএআর কন্ট্রোল রুমের সাথে যোগাযোগ করেন।

তখন সকলেই আশা করেছিল, ম্যাচের বিতর্ক দুর করার জন্য মাঠের পাশে রাখা স্ক্রিনে ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করে যাবেন। কিন্তু তিনি সেখানে যায়নি। সকলকে চমকে দিয়ে, অল্প কিছুক্ষণ আলোচনার পরই ‘প্লে অন’ বলে খেলা পুনরায় শুরু করে দেন।

প্রথম আর্ধে ম্যাচ নিজেদের করে নিয়েছে বেলজিয়াম, তারা ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। কিন্তু ম্যাচের দ্বিতীয় অর্ধের শুরু থেকেই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে তিতের দল। ঐসময় যদি পেনাল্টি থেকে গোলটি করতে পারত তাহলে খেলার গতি পাল্টে দিতো ব্রাজিল।

একটি গোল ব্রাজিলকে যেমন মানসিকভাবে অনেক চাঙ্গা করে দিত, হতোদ্যম করে দিত বেলজিয়ামকেও। ফলে দিনশেষে ম্যাচের ফলাফল ব্রাজিলের পক্ষে আসুক বা না আসুক, ম্যাচটি নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত সময়ে গড়াতেই পারত। কিন্তু রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তে তা আর হয়নি।

এ নিয়ে বিবিসি ওয়ানের সহ ধারাভাষ্যকার ড্যানি মারফি বলেন, “আমি জানি না এইমাত্র আমরা যা দেখলাম, তারা (ভিএআর কন্ট্রোল রুমের রেফারিরা) কি তা দেখেননি? তাহলে এটিকে পেনাল্টি না দিয়ে কীভাবে পারেন তারা? খুব বড় বাঁচা বেঁচে গেল বেলজিয়াম। কোম্পানিকে অনেক ভাগ্যবান বলতে হবে।”

ব্রাজিলকে পেনাল্টি না দেয়ার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে? সব থেকে গ্রহণযোগ্য যুক্তি যেটি, তা হলো কম্পানি যখন স্লাইড করে জেসুসকে ট্যাকলটি করতে যান, ততক্ষণে বল বাই-লাইনের বাইরে বেরিয়ে গেছে। তাই কম্পানির সাথে যদি জেসুসের সংঘর্ষ না-ও হতো, তাহলেও তিনি গোলে শট নিতে পারতেন না। বল ইতিমধ্যেই ‘আউট অফ প্লে’ হয়ে যাওয়ার ফলে রেফারি চাইলে পেনাল্টি না-ও দিতে পারেন, এবং এক্ষেত্রেও হয়েছে সেটিই।

কিন্তু তারপরও আরেকটি প্রশ্ন থেকেই যায়। ভিএআরের মাধ্যমে নিজ চোখে পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখার সুযোগ থাকলেও, সেটি কেন নিলেন না রেফারি? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেকেই টেনে আনছেন নেইমারকে। এমনকি এ কথাও তারা বলছেন যে নেইমারের কৃতকর্মের জন্যই সাজা পেতে হয়েছে তার দলকে!

ইংলিশ খেলোয়াড় অ্যালান শেয়ারার বলেন, “এটিই (নেইমারের ডাইভ) সম্ভবত কারণ যেজন্য পাঁচ বা দশ মিনিট বাদে তারা ভিএআরের কল পায়নি। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তারা যদি কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, নিঃসন্দেহে সেটি ব্রাজিলের বিপক্ষেই গিয়েছে। নেইমারের এরকম কাজ, ইচ্ছাকৃত ডাইভ বা চিট করতে চাওয়া, দলকে কখনোই কোনভাবে সাহায্য করতে পারে না। আমি মনে করি ব্রাজিল তার এসব কাজেরই শাস্তি পেয়েছে।”