পুরো নাম রবার্তো ফিরমিনো বারবোসা ডে অলিভেরা। ব্রাজিলের মেসিও অ্যালগোয়াসে ১৯৯১ সালে জন্ম তার। আর ব্রাজিলের যে জায়গায় জন্ম সেই ‌মাসেইও বিখ্যাত ছিল আলাগোয়াস কুখ্যাত দুষ্কৃতিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য। গুলির আওয়াজ, মারামারি, প্রাণহানি কিংবা হানা-হানি সেখানকার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। রাস্তাঘাটে বেরোতে হত প্রাণ হাতে নিয়ে। সে কারণেই ছোটবেলা থেকে ফিরমিনোকে বাবা–মা খুব একটা বাড়ির বাইরে যেতে দিতেন না। তাদের ভয়, এই বুঝি ছেলে দুষ্কৃতীকারীদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।

তবে হ্যাঁ, স্কুলে যাওয়া–আসা বাদে বাবাকে জলের ব্যবসায় সাহায্যের সুবাধে মাঝে মাঝে বাড়ির বাইরে যাওয়ার সুযোগ মিলতো ফিরমিনোর। আর তখনই দেখতেন সমবয়সী ছেলেরা ফুটবল কিংবা অন্য খেলায় মত্ত। এসব মোটেও ভালো লাগতো না ফিরমিনোর। তাই বুদ্ধি খাটিয়ে বানিয়ে ফেললেন বাড়ির তালার নকল চাবি। গভীর রাতে যখন বাবা–মা ঘুমাতেন তখনই বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়তেন খেলার উদ্দেশ্যে। তবে সেই সুখ আর বেশি দিন সইলো না। কিছুদিন পরই ব্যাপারটা বাবা–মায়ের কানে পৌঁছায়। ছেলের এহেন কর্মকাণ্ডে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠার মতো অবস্থা তাদের। এটা কিভাবে সম্ভব? এত সাহস কোথায় থেকে পেল সে?

বাবা-মায়ের মনে যখন এমনও হাজারো প্রশ্ন তখন পাড়া প্রতিবেশীদের আবদার, ফিরমিনো সত্যিকারের প্রতিভাবান। তাকে তোমরা বাধা দিও না। সে ভবিষ্যতে ভালো করবে। তার ভবিষ্যত উজ্জ্বল।

এদিকে বাবার পানির ব্যবসা। সেখান থেকে কতইবা আয় হয়? তার মধ্যে ছেলের ট্রেনিং ফি, বল কিংবা জুতা-জার্সির টাকা কোথায় থেকে জুটবে। সারাক্ষণ ফুটবল নিয়ে মেতে থাকতেন, ফুটবলকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোতেন। এভাবেই চোখে পড়ে যান স্থানীয় সিআরবি ক্লাবের কোচ লুইজের। লুইজ পরে বলেছেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে বুট কেনার পয়সা না থাকায় খালি পায়ে প্যাকটিস করতে হয়েছে তাকে (ফিরমিনো)। আমিই ওকে বুট কিনে দিই। পাশাপাশি যাতায়াতের খরচও দিই। ওর মতো অনেকে ছেলে ড্রাগ ট্রাফিকিং এবং গাড়ি চুরির সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে আমি জানতাম, ফিরমিনো কোনো দিন এসব করবে না।’‌

১৬ বছর বয়সে টোমবেন্স ক্লাবে সই করেন ফিরমিনো। কিন্তু লোনে পাঠিয়ে দেয়া হয় দ্বিতীয় ডিভিশনের ক্লাব ফিগুয়েরেন্সে। প্রথম প্রথম বাড়ি ছেড়ে থাকতে পারতেন না। রোজ রাতে কাঁদতেন। যা তার কোচদের চিন্তিত করে তোলে। বাড়ি ফিরেও মায়ের কাছে না যাওয়ার বায়না ধরতেন। তবে এসব বিষয় বিষয়ে কিছুতেই খেলায় প্রভাব পড়তে দিতেন না। এভাবেই জার্মান স্কাউটের নজরে পড়ে। বর্তমানে তিনি লিভারপুলের হয়ে মাঠ মাতাচ্ছেন। প্রায় ২৯ মিলিয়ন অর্থের বিনিময়ে তাকে কিনে লিভারপুল। আর ব্রাজিলের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে গর্বের সঙ্গে জায়গাও নিয়েছেন ফিরমিনো।