ম্যাচ চলাকালিন সময়েই নিতে হয় গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত। গতকালকের ম্যাচে কাপ্তান মাশরাফির একটি সিদ্ধান্তই বদলে দিয়েছে ম্যাচের ফলাফল। তখনি হাতের মুঠোয় এনে ফেলেছে এই ম্যাচ।  ওয়ার্নার পার্কে শো শো বাতাসে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। সামনেই রয়েছে ক্যারিবীয়ন সাগরের নীল জলরাশি, সাথে রয়েছে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল বিশাল পাহাড়। সুন্দর এই দ্বীপে সকল কিছুই তাদের কাছে উপভোগ্য লেগেছে।

পুরস্কার বিতরণীর সময় সকলে মাঠে চলে যাওয়ার কিছুখন পর ড্রেসিংরুম থেকে বের হলেন কাপ্তান মাশরাফি। এই সিরিজে তামিম ইকবাল হয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ, সেই সাথে সিরিজসেরাও তামিম— এই সিরিজের সব পুরস্কার ‘খান সাহেব’ নিয়ে গেলেন, তা নিয়ে অধিনায়কের কী রসিকতা! একটি পুরস্কার মাশরাফিকেও দেওয়া উচিত। কারণ দ্বিতীয় ম্যাচটা হারের পর গায়ানা থেকে যখন বিমানে উঠবে বাংলাদেশ, তার কিছুক্ষণ আগে সতীর্থদের ডেকে মাশরাফি বলেন, ‘যদি প্রথম ম্যাচটা হেরে যেতাম ১-১ থাকত না, থাকত ২-০। আমাদের এখনো সুযোগ আছে, চলো সেন্ট কিটসে সুযোগটা কাজে লাগাই।’

মাশরাফির এই অনুপ্রেরণার জন্যই এই ম্যাচে মাশরাফিকে একটা পুরস্কার দেওয়া উচিত ছিলো। ম্যাচ বদলে দেওয়া এক আইডিয়ার জন্যও। এই দিন তামিম সেঞ্চুরি করার পর ড্রেসিংরুমের দোতলা থেকে নিচে এসে তামিমকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন কাপ্তান মাশরাফি। পায়ে তাঁর প্যাড। সাব্বির রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন তখনো নামেননি। মাশরাফি তৈরি হয়ে বসে আছেন, ঘটনা কী?

কিছুক্ষণ পরে বিষয়টা পরিষ্কার হলো, ছয়ে নেমে পড়লেন অধিনায়ক। ৪ চার, ১ ছক্কায় ২৫ বলে তাঁর ৩৬ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর এনে দেন তিনি। মাশরাফির এ ঝড়টা যে ম্যাচের রং বদলে দিতে সহায়তা করেছে, বললে ভুল হবে?

ছয়ে নামার ভাবনা কীভাবে এল, সে কথা মাশরাফি খোলাসা করলেন ম্যাচের পর, ‌‘৩৫ ওভারে পর থেকে কোচ চাইছিলেন রানরেট বাড়াতে। কোচকে বললাম, আমি যাই? তখন ব্যাটসম্যানদের সোজা শট খেলা কঠিন। চিন্তা করলাম, ঝুঁকিটা আমিই নিই। কোচও আমাকে সমর্থন করলেন। বললেন, কেন দ্বিধায় ভুগছ? যাও।’

মাশরাফি মাঠে নামার পরের ইতিহাস সকলেই দেখেছেন! রাতে ডিনারের পর টিম হোটেলের সামনে আড্ডা দেওয়ার সময়ও মাশরাফি বারবার বলছিলেন, ‘আমার ওই সময়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা বড় কাজে দিয়েছে।’

যখন কথা বলছিলেন, রেস্তোরাঁর বড় পর্দায় চলছিল ম্যাচের হাইলাইটস। মাশরাফি ম্যাচ দেখছেন আর আপন মনে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে যাচ্ছেন ম্যাচের প্রতিটা মুহূর্ত। নির্বাক আর বিস্ময়ভরা চোখে অধিনায়কের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, আর মনে হয়, মাশরাফির অক্সিজেন যেমন ক্রিকেট, বাংলাদেশ দলের অক্সিজেনও তিনি!