১। মেসির পুরো নাম ‘লিওনেল আন্দ্রেস মেসি’। ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন তিনি আর্জেন্টিনার রোসারিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, তার জন্মআর বিখ্যাত ‘চে গুয়েভারার’ জন্ম একই শহরে।

২। মেসির জন্ম ইতালিতে। তার বাবা কাজ করতেন একটি ইস্পাত কারখানায়, আর মা ছিলেন খন্ডকালীন পরিচ্ছন্নতা কর্মী । তিনি একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

৩। ছোটবেলায় তিনি অনেক লাজুক ছিলেন।প্রথম সাক্ষাতে তাকে যে কেঊ বোবা কিংবা অটিস্টিক ভাবতো। তার শিক্ষকরা তাকে মানসিক রোগের ডাক্তার দেখানোর জন্য বলেছিলেন।

৪। ছোটকালে একটি দূরারোগ্য ব্যাধি ‘গ্রোথ হরমোন ডিফিসিয়েন্সি’ তে ভুগেন মেসি । যা তার লম্বা হওয়ার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

৫। মাত্র ১১ বছর বয়সে এই রোগ ধরা পরে এবং চিকিৎসক জানিয়ে দেন যে, যদি তাড়াতাড়ি চিকিৎসা না হয় তাহলে হয়তো মেসি মারা যাবেন।

৬। এই রোগের চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে প্রায় ৯০০ ডলার খরচ হত। যা মেসির পরিবারের জন্য যোগাড় করা সম্ভব ছিল না।

৭। তাই ভাগ্য অন্বষণে মেসির বাবা আর্জেন্টিনা ছেড়ে স্পেন পাড়ি জমান। তবে এর আগে তিনি আর্জেন্টিনার বিভিন্ন ফুটবল ক্লাবের কাছে মেসির চিকিৎসার খরচ জোগানোর জন্য সাহায্য চান। তখন কেউই তাতে সাড়া দেয় নি। তখন মেসি আর্জেন্টিনার ‘নিয়ওয়েলস ওল্ড বয়েজ’ ক্লাব এ খেলতেন।

৮। স্পেন গিয়ে মেসি বার্সেলোনায় মাত্র ১৩ মিনিট এর একটি ট্রায়াল দেন। আর তাতেই বার্সা কমিটি মেসিকে দলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এবং বার্সেলোনা মেসির চিকিৎসার সব খরচ জোগানোর দায়িত্ব ও নিয়ে নেয়।

৯। বার্সেলোনার সাথে মেসির প্রথম চুক্তি হয়েছিল একটি টিস্যুপেপারে। বার্সার তৎকালীন পরিচালক কার্লোস রেক্সাচ মেসির প্রতিভা দেখে এতোটাই মুগ্ধ হন যে তিনি তখনি মেসির সাথে চুক্তি করতে চান কিন্তু হাতের কাছে কোন কাগজ না থাকায় টিস্যু পেপারে তা লিখে নেন।

১০। সবসময়ই গোল করার পর আকাশের দিকে দুই হাত উঁচু করে মেসি যে উদযাপন করেন, তা দিয়ে তিনি তার দাদীর কথা স্মরণ করেন। লিও যখন মাত্র ১০ বছর বয়স তখন তার দাদী মারা যান। কিন্তু তার আগে তিনিই প্রথম মেসির ফুটবলের প্রতি ভালবাসা দেখে মেসি কে একটি ফুটবল কিনে দেন। সেই থেকেই মেসি ফুটবল খেলায় আরো আগ্রহী হন। তাই গোল করার পর মেসি তার দাদিকে প্রতিটি গোলই উৎসর্গ করেন।

১১। মেসি পর পর চার বার ব্যালন ডি’অর জিতে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড এ নাম লেখান। বর্তমানে তিনি ৫ টি ব্যলন ডি’অর এর মালিক।

১২। মেসি শুধুই একজন দুর্দান্ত খেলোয়াড় নয়, তিনি একজন উদার মনের মানুষ ও বটে। ‘লিও মেসি ফাউন্ডেশন’ থেকে গরীব শিশুদের কে সাহায্য করা হয়। তাছাড়া, প্রতিনিয়ত অটিজম রোগীদেরো সাহায্য করেন মেসি। আর্জেন্টিনা ও স্পেনে অনেক স্কুল, হাসপাতাল ও রাস্তা তৈরি করা হয়েছে তার সাহায্যের টাকা দিয়ে।

১৩। ‘ফ্র্যাজাইল এক্স সিন্ড্রোম’ রোগীদের ও সাহায্য করে থাকেন মেসি ।

১৪। সবকিছু (বেতন ও স্পন্সরশীপ) মিলিয়ে তিনি প্রতিদিন গড়ে ১,৮৪,০০০ মার্কিন ডলার আয় করেন।

১৫। মেসিকে স্পেনের জাতীয় দলে খেলারপ্রস্তাব দেওয়া হয় কিন্তু মেসি তা ফিরিয়ে দেয়। মেসির ইচ্ছে ছিল সে তার দেশ আর্জেন্টিনার হয়ে খেলবে। ২০০৪ সালে মেসি সে সুযোগ পায়।

১৬। বার্সেলোনা যদি সিদ্ধান্ত নেন যে তারা মেসির সাথে চুক্তি শেষ করবে, তাহলে বার্সাকে প্রায় ৩৩০ মিলিয়ন ডলার ফি দিয়ে চুক্তি শেষ করতে হবে।

১৭। মেসির আর্জেন্টিনা ও স্পেন দুই দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে। ২০০৫ সালে মেসি স্পেনের নাগরিকত্ব পায়।

১৮। স্পেন জাতীয় দলে খেলার জন্য প্রস্তাব পায় মেসি । কিন্তুতার দেশের কথা ভেবে ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তিনি।

১৯। ২০০৮ সালে একটি অলিম্পিক মেডেল জেতেন মেসি। তিনি ওই বছর আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে অলিম্পিক কাপ জিতেন।

২০। তিনি কখনও তার নিজের খেলার ভিডিও/হাইলাইটস দেখেন না।

২১। ২০০৫ সালে তিনি আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামেন। কিন্তু নামার মাত্র ৪৭ সেকেন্ড এর ভিতর তাকে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়ে যেতে হয়।

২২। মেসি মাত্র ১৭ বছর বয়সেই বার্সার হয়ে শুভ সূচনা করেন। এবং তখনকার সময় তিনিই বার্সেলোনার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে গোল করার রেকর্ড করেন।

২৩। বর্তমানে মেসির বার্সেলোনা এবং আর্জেন্টিনা দুই জায়গাতেই জার্সি নাম্বার ১০। মেসির এই ফুটবল প্রতিভায় অনুপ্রেরণা হিসেবে যিনি ছিলেন, তিনি হলেন মেসির দাদী।

২৪। মেসির সবচেয়ে কাছের বন্ধুর নাম ডেকো এবং রোনালদিনহো। তারা দুজনেই ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার। তারা দুজনেই বার্সেলোনায় খেলতেন। মেসি বার্সা দলে ঢোকার সময় ডেকোর জার্সি নাম্বার ছিল ২০ আর রোনালদিনহোর ছিল ১০। এই দুটি নাম্বার যোগ করলে হয় ৩০। তাই মেসি বেছে নিয়েছিলেন ৩০ নাম্বারজার্সি।

২৫। ছোটবেলা থেকে মেসি অসাধারণ খেলতেন। একাই মাঠের সবাইকে কাটিয়ে গোল দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি খাট হওয়ার কারণে হেডে গোল করতে পারতেন না। তা দেখে তার কোচ তাকে একদিন বলেন যে যদি মেসি হেড দিয়ে গোল দেয় তাহলে তাকে বিস্কুট দেয়া হবে। কারণ ছোট বেলায় মেসি বিস্কুট খেতে খুবই পছন্দকরতেন।আর কোচের কথা শুনে মেসি তখন সবাইকে কাটিয়ে বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে যেতেন এবং সেখানে গোলকিপারকেও কাটিয়ে ফেলতেন। এবং তার পর মেসি বল টিকে পা দিয়ে উঠিয়ে হেড দিয়ে গোল করতেন।