
গোল এবং লিওনেল মেসি এক সূত্রে বাধা। এক পঞ্জিকাবর্ষে দেশ ও ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোল করে রেকর্ড রয়েছে গিনেস বইয়ে। বার্সেলোনা ও লা লিগায় সর্বোচ্চ গোল করে সেই রেকর্ডটাও নিয়েনিয়েছে মেসির দখলে। সত্যি বলতে, আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসির গোলের রেকর্ড বলে শেষ করাই মুশকিল! তার চেয়ে সহজ হলো কোন কোন দলের বিপক্ষে মেসি এখনো ডাক (গোল) কাটাতে পারেননি, তা মনে রাখা।
‘ডাক’—শব্দটা ক্রিকেটেই সব থেকে বেশি পরিচিত। (০) রান করে আউট হওয়া ডাক। একটু কারিকুরি করে শব্দটা ফুটবলেও ব্যবহার করা যায়। চেলসির বিপক্ষে যেমন টানা আট ম্যাচ খেলে গোল পাননি মেসি। তবে গত মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ ১৬ প্রথম লেগে চেলসির জালে গোল করে ইংলিশ ক্লাবটির বিপক্ষে মেসি ‘ডাক’ কাটিয়েছেন। তাহলে বাকি রইলো আর ‘এগারো’—এই ‘এগারো’ ক্লাবের বিপক্ষে মেসি এখনো ‘ডাক’ (গোল) কাটাতে পারেননি।
মেসির মতো বিশ্বসেরা ফুটবলার কিছু নির্দিষ্ট ক্লাবের বিপক্ষে গোলবঞ্চিত থাকবেন, এটা ভাবতেই কেমন যেন লাগে! কিন্তু এটাই ফুটবল। এক জন ফুটবলার যতই বড়মাপের খেলোয়াড়ই হোক না কেন, খেলাটায় কোথাও না কোথাও একধরনের সমতা রাখবেই। ইউনিয়ন দেপোর্তিভা অ্যাটলেটিকো গারামেনেত মিলান—সংক্ষেপে ক্লাবটির নাম গারামেনেত। স্প্যানিশ ফুটবলে এখন চতুর্থ বিভাগের দল। ২০০৪ কোপা ডেল রে আসরে বার্সেলোনার মাঠে গিয়ে স্বাগতিকদের ১-০ গোলে হারিয়ে এসেছিল এই গারামেনেত। মেসি তখন বার্সার সিনিয়র দলে সবে খেলা শুরু করেছেন। তো, এই ১৪ বছরে গারামেনেতের জালে মেসি কখনো গোল করতে পারেননি।
বেশ অচেনা কিছু স্প্যানিশ ক্লাবের বিপক্ষে মেসির গোলবঞ্চিত থাকার এখানেই শেষ নয়। কাদিজ, মুর্সিয়া ও জেরেজ। নামগুলো চেনা যায়? এ তিনটি ক্লাবের কোনোটিই এখন আর লা লিগায় নেই। কাদিজ নেমে গেছে দ্বিতীয় বিভাগে, মুর্সিয়া ও জেরেজ যথাক্রমে তৃতীয় এবং চতুর্থ বিভাগে। এ তিনটি ক্লাবের তুলনায় জিরোনা বেশ পরিচিত ক্লাব।
এবারই প্রথম লা লিগায় উঠে আসা দলটিও মেসিকে গোলবঞ্চিত রেখেছে। সব মিলিয়ে স্পেনের এই পাঁচটি ক্লাবের (গারামেনেত, কাদিজ, মুর্সিয়া, জেরেজ ও জিরোনা) বিপক্ষে মেসি এখনো গোল পাননি। ইতালিয়ান এবং রাশিয়ান ক্লাবও মেসিকে বঞ্চিত রেখেছে। উদিনেসে ও রুবিন কাজান। ২০০৪/০৫ চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপপর্বে উদিনেসেকে পেলেও মেসি তাঁদের জাল খুঁজে পাননি। আর রাশান রুবিন কাজানকে তো দুই মৌসুমে (০৯/১০, ১০/১১) পেয়েও ব্যর্থ। আছে কাতারের ক্লাবও! ২০১১ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ সেমিতে কাতারের ক্লাব আল শাদের বিপক্ষে বার্সা ৪-০ ব্যবধানে জিতলেও মেসি গোল পাননি। উদিনেসের বাইরে মেসিকে গোলবঞ্চিত রাখা ইতালিয়ান ক্লাবটি ইন্টার মিলান। ২০০৯-১০ মৌসুমে তিনবার ইন্টারের মুখোমুখি হয়েও গোল পাননি বার্সার এ ফরোয়ার্ড। ইংলিশ ক্লাবগুলোর মধ্যে এ গৌরব শুধু লিভারপুলের। ২০০৬-০৭ চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলোয় মেসিকে গোলবঞ্চিত রেখেছিল ‘অলরেড’রা। পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকার বিপক্ষেও মেসি জাল খুঁজে পাননি। চ্যাম্পিয়নস লিগ ২০০৫-০৬ কোয়ার্টার ফাইনালে বেনফিকার মুখোমুখি হয়েছিল বার্সা। কিন্তু চোটের কারণে মেসি সেই দুই লেগের ম্যাচ খেলতে পারেননি। এরপর ২০১২-১৩ গ্রুপ পর্বে বেনফিকাকে পেলেও গোল পাননি।
মেসির এই গোল না পাওয়া ক্লাবগুলোর তালিকা মোটেও দীর্ঘ নয়। এমন অনেক খেলোয়াড় রয়েছেন, যাঁরা হয়তো গোটা ক্যারিয়ারেই ১১ দলের বিপক্ষে গোল করতে পারেননি। কিন্তু নামটা লিওনেল মেসি বলেই খচখচানিটা থেকে যায়।
