‘আমার ছবি তুলে আর কী হবে?’ তৃতীয় ওয়ানডে খেলার জন্য সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। কাল দুপুরে সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে ক্যামেরার দিকে তাকাতে যেন লজ্জা পাচ্ছে রুবেল হোসেনের।  দ্বিতিয় ওয়ানডে শেষ করে সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে আসার পথে বিমানে ভিতর সকলে হাসিখুশি ছিলেন, কিন্তু রুবেল ছিলেন বিবর্ণ। পুরোটা পথে পাড়ি দিলেন চোখ বুজে।

রুবেলের মুখের এই অন্ধকার এর আগেও দেখা গেছে নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল ম্যাচ খেলে ঢাকায় আসার পথে। নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে পরাজয়ের ভূমিকাও যে রুবেলের কম নয়।

এর আগে রুবেল তার অভিষেক সিরিজের ফাইনাল ম্যাচটাও ডুবিয়েছিলেন। সেই ম্যাচে জয়ের কাছ থেকে ফিরে আসে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ১৫৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে ১১৪ রানেই। সেই মুহুর্তে জয়টা ছিলো বাংলাদেশের হাতের, তখন মহা সর্বনাশ করেছিল ফারভিজ মাহরুফ-মুত্তিয়া মুরালিধরনের অবিচ্ছিন্ন নবম উইকেট জুটি (৩৯*)।

সেই সময় ৩০ বলে শ্রীলঙ্কার প্রয়জন ছিলো ৩৫ রান, সময় ২ ওভার ৩২ রান দিয়ে দেন রুবেল! মুরালিই নিলেন ৩১ রান। অভিষেক সিরিজেই রুবেল মনে হয় বুঝে গিয়েছিলেন ডেথ ওভারে তাঁর ভোগান্তি আছে আরও!

সেই ভোগান্তির চড়া মূল্য দিতে হবে বাংলাদেশকে, কে ভেবেছিল! এ বছরই এমন ঘটনা ঘটল তিনবার। গত মার্চে কলম্বোয় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ভারতের দরকার ছিল ১২ বলে ৩৪। এক ওভারে দিলেন ২২ রান। সৌম্য সরকার পারলেন না ৬ বলে ১২ রান আটকাতে। ভারত জিতে গেল নিদাহাস ট্রফি।

গত মাসে দেরাদুনে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ১৩৫ রানের ছোট লক্ষ্য দেওয়ার পরও আফগানদের জন্য ম্যাচটা কঠিন করে তুলেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। ১৮ ওভার যে দুর্দান্ত বোলিং হয়েছিল সেটি একাই শেষ করে দিলেন রুবেল। তাঁর করা ১৯তম ওভারে ২০ রান তুলে ম্যাচ নিজেদের করে নিলেন মোহাম্মদ নবী।

গায়ানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ডেথ ওভারে রুবেল যে বোলিংটা করলেন সেটি আরও মর্মান্তিক! ৪৮ ওভার শেষে ক্যারিবীয়দের রান ৯ উইকেটে ২৪২। ওই সময়ে রুবেলই ছিলেন মাশরাফির সবচেয়ে সেরা অস্ত্র। ৮ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট, দলের সবচেয়ে সফলতম বোলার এত বাজে বোলিং করলেন, ৪৯তম ওভারে দিলেন ২২ রান। রুবেলের এই বাজে বোলিংয়ের কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি মাশরাফি, ‘ওই সময় ওকে ছাড়া কাকে দেব বলেন? আগের আটটা ওভারে সে অসাধারণ বোলিং করেছে। তিন উইকেট নিয়েছে। ওকে আমার নির্দেশনা ছিল একটাই, শেষ উইকেটটা নিয়ে নিতে হবে। নিতে পারলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ২৫০ হতো কি না সন্দেহ! অথচ ও রান দিয়ে ফেলল কত!’

ধারাবাহিক ব্যর্থতায় ডেথ ওভারে যতটুকু সাফল্য পেয়েছেন রুবেল, সেটিও ঢাকা পড়ে যাচ্ছে এখন। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর দুর্দান্ত বোলিং ভোলার নয়। কিন্তু সেই ইয়র্কার, গতি কোথায়? একই ভুল আজও করলে গেইল-লুইস-হেটমায়াররা যে তাঁকে ক্যারিবিয়ান সাগরে আছড়ে ফেলতে দুবার ভাববেন না, তা জেনেই ওয়ার্নার পার্কের নামতে হবে রুবেলকে।