
পাঠক দের জন্য পোষ্টটি হবুহু তুলে ধরা হলো, ৬ ই আগষ্ট ২০১৫, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ৯ম বর্ষপূর্তি ছিল বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের, ওই সময় হাতে গোনা যে কয়েকটি ক্রিকেট রিলেটেড ফেসবুক গ্রুপ ছিল তার মধ্যে অন্যতম এই গ্রুপটা। আমাদের এই গ্রুপই ছিল একমাত্র কোন স্পেশালি কোন ক্রিকেটারকে নিয়ে, তো গ্রুপটা সাকিব আল হাসান কেন্দ্রিক হওয়ায় আমাদের মুল আয়োজনও তাকেই ঘিরেই করা হত। তারই অংশ হিসেবে সাকিব আল হাসানের ১০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে একটা সংবর্ধনার আয়োজন করে সাকিবিয়ান পরিবারটি, এই জন্য উনার সাথে যোগাযোগ করা হলে আমাদের ডাকে সাড়া দেন এবং ৬ ই আগষ্ট ২০১৫ তে আমাদের প্রোগ্রামে উপস্থিত হন।
স্পেশালি একজন ক্রিকেটারকে নিয়ে বাংলাদেশে এরকম আয়োজন সেটাই প্রথম ছিল, আর ওই প্রোগ্রামে উপস্থিত সব ভক্তই আগে কখনোই সাকিব আল হাসানকে এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাননি। স্বভাবতই সবাই একটু বেশিই এক্সাইটেড ছিল কারণ যাকে মনের মধ্যে লালন করেন তাকেই প্রথম বারের মত সামনে থেকে দেখার ও মেশার সুযোগ পাচ্ছে। আর এই বিষয়টাই একটা অপ্রত্যাশিত ও ভয়ংকর পরিবেশের সৃষ্টি করলো, অবশ্য এর প্রভাব প্রোগ্রামটিতে পড়েনি এবং সুষ্ঠুভাবেই অনুষ্ঠানটি শেষ হয়েছিল। এবার সেদিনের সেই ঘটনাটি ও অনুষ্ঠানের কিছু অংশ তুলে ধরবো…
নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেদিন আমাদের অনুষ্ঠানে এসে পৌছান সাকিব আল হাসান, সেদিন উনাকে পেয়ে আমরা যতটা না খুশি হয়েছিলাম তার চেয়ে বেশি আমাদের পেয়ে সাকিব ভাই বেশি খুশি হয়েছিলেন। তিনি সেটা প্রকাশও করেছিলেন, আমি জেনেছি (ম্যানেজারের কাছ থেকে) তোমরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছো, আমি খুবই খুশি তোমাদের সাথে এমন একটা অনুষ্ঠানে সময় কাটাতে পারছি। তোমরা অনেক কষ্ট করে এসেছো শুধু আমার জন্য, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যথেষ্ট সময় দেওয়ার। এমন সময়ই সেই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাড়াহুড়ো করে সেলফি উঠাতে গিয়ে এক ভক্ত (ভক্ত নামের কুলাঙ্গার) সাকিব আল হাসানকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেন। তখন তিনি সেখান থেকে চলে যান, পাল্টে যায় অনুষ্ঠানের পরিবেশ, অনুষ্ঠান শুরুর আগে বারবার নিষেধ করা স্বত্বেও এমন কর্মকাণ্ডের জন্য সবাই সেই ভক্তটির উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়।
আমরা ক্রিকেটারদের না বুঝলেও উনারা ঠিকই আমাদের আবেগটা জানেন, সাকিব ভাই সেদিন চলে যাওয়ার সাথে সাথে ম্যানেজারকে দিয়ে বলে পাঠান যে এটা স্বাভাবিক ঘটনা আর আমি আবারো আসবো তোমাদের সাথে সময়টা কাটাতে। ছেলেটির কোন দোষ নেই, অতিরিক্ত উত্তেজনা থেকেই এমন ঘটে গেছে। এরপর ১০ মিনিট পরে সেদিন সাকিব আল হাসান আমাদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন, ওই ঘটনার পরও প্রায় আধা ঘন্টা আমাদের সময় দিয়েছেন। ব্যক্তিগত ভাবে ছবি না উঠালেও (আসলে সেটা সম্ভবও ছিল না) গ্রুপ ফটো উঠিয়েছেন, গল্প করেছেন, কেক কেটেছেন আমাদের সাথে ডিনার করেছেন। সব শেষে আমাদেরকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন এমন একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করার ও উনাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য।
সেদিন উনি চাইলেই ছেলেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতেন, আমাদের অনুষ্ঠান বর্জন করতে পারতেন কিন্তু তিনি সেটা করেন নি কারণ তিনি তো বেয়াদব। ওই অনুষ্ঠানের পর আমাদের গ্রুপ থেকে আরো বেশ কয়েকটা (প্রতি বছর অন্তত ১ টা) অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ সাকিব ভাই সবকটি অনুষ্ঠানে হাসি মুখে উপস্থিত হয়েছেন। আমরা ভুলে যাই যে তিনি মানুষ কিন্তু আমাদের মত সাধারণ নন, একটা বিষয় লক্ষণীয় যে খেয়াল করে দেখবেন সমর্থকদের ক্রিকেটাদের যত গুলো ছবি বা সেলফি আছে তার অর্ধেকই সাকিব আল হাসানের সাথে।
তার ভক্ত থেকে শুরু করে চরম পর্যায়ের একজন হেটারও চান উনার সাথে ছবি উঠাইতে, কিন্তু একজন মানুষের পক্ষে কি সম্ভব সবার আবদার মেটানো? আর না মেটাতে পারলেই কি সে বেয়াদব…?
