
টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া ১০টি দলই প্রথম পর্বে মুখোমুখি হবে প্রত্যেকের সাথে। প্রথম পর্ব শেষে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ ৪টি দল খেলার সুযোগ পাবে সেমিফাইনালে। আর সেমিফাইনালে জয়ী ২ টি দল চলে যাবে ফাইনালে। আসন্ন বিশ্বকাপে নতুন কোনো তারকা ক্রিকেটারের ঝলক দেখার অপেক্ষায় আছে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০১৫ বিশ্বকাপে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, কুমার সাঙ্গাকারা, মাইকেল ক্লার্ক, শহীদ আফ্রিদিসহ আরও অনেক তারকা ক্রিকেটার। এবারের বিশ্বকাপেও ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে পারেন বেশ কয়েকজন তারকা ক্রিকেটার। ২০১৯ বিশ্বকাপই ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ হবে, এমন পাঁচজন এশিয়ান তারকা ক্রিকেটারদের নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।
১. মাশরাফি বিন মর্তুজা (বাংলাদেশ)
২০১৫ বিশ্বকাপের পর বদলে যাওয়া দলগুলোর মধ্যে একটি বাংলাদেশ। মাশরাফির নেতৃত্বে দলটি আসন্ন বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে র্যাঙ্কিংয়ের সাত নম্বর দল হিসেবে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ অনেকগুলো ওয়ানডে সিরিজে সাফল্যের দেখা পেয়েছে তার অধীনেই। মাশরাফির অধিনায়কত্বেই টাইগাররা পাকিস্তান, ভারত ও সাউথ আফ্রিকার মতো বাঘা দলগুলোর বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে ।

‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ খ্যাত এই বোলার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ই পার করেছেন শল্যচিকিৎসকের ছুরির নিচে। হাঁটুর চোটে পুরো ক্যারিয়ারে অস্ত্রোপচার করেছেন মোট ১১ বার। ২০২টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে প্রতিপক্ষের ২৫৮টি উইকেট শিকার করেছেন মাশরাফি। চোটে জর্জরিত এই ফাস্ট বোলার ক্যারিয়ার সুদীর্ঘ করতে পারেননি নিজের প্রিয় ফরম্যাট টেস্টে। ৩৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৭৮ উইকেট।
৫৪টি টি টোয়েন্টিতে বল হাতে মাশরাফির শিকার করেছেন ৪২টি উইকেট। পাশাপাশি দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতেও অবদান রেখেছেন ৩৫ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। বয়সের কারণে ২০১৯ বিশ্বকাপের পর লাল সবুজ জার্সিতে মাশরাফিকে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের এযাবতকালের সেরা এই অধিনায়ক ২০১৯ বিশ্বকাপে দলকে কতটা সাফল্যের মুখ দেখাতে পারেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
২. মোহাম্মদ হাফিজ (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন হলেন মোহাম্মদ হাফিজ। পাকিস্তানের সবুজ জার্সিতে ২০৩টি ওয়ানডে ম্যাচে ব্যাট হাতে করেছেন ৬১৫৩ রান। ৫৫টি টেস্টে ৩৭.৬৫ গড়ে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩৬৫২ রান। ৮৯টি টি টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ২৪.৪৬ গড়ে ১৯০৮ রান সংগ্রহ করেছেন এই অলরাউন্ডার। বল হাতে ওয়ানডেতে ১৩৭, টেস্টে ৫৩ এবং টি টোয়েন্টিতে প্রতিপক্ষের ৫৪টি উইকেট শিকার করেছেন হাফিজ।
কলকাতা নাইট রাইডার্স, লাহোর লায়ন্স, পেশোয়ার জালমি, সেন্ট কিটস, নেভিস পেট্রিয়স, লাহোর কালান্দার্স, রাজশাহী কিংস সহ বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজি দলে খেলেছেন এই অলরাউন্ডার। বিপিএলের ২০১৯ মৌসুমে রাজশাহী কিংসের জার্সিতে খেলছেন হাফিজ। তবে বোলিং অ্যাকশনের জন্য পুরো ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকবার নিষিদ্ধ হয়েছিলেন এই পাকিস্তানি ক্রিকেটার।

বর্তমানে ৩৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন ২০১৮ সালে। ওয়ানডেতেও শীঘ্রই অবসর নেয়ার পরিকল্পনা আছে হাফিজের। তবে ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলার জন্যই ওয়ানডে থেকে এখনও অবসর নেননি বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কিত এই অলরাউন্ডার। আসন্ন বিশ্বকাপের মঞ্চেই নিজের অবসরের ঘোষণা দিতে পারেন মোহাম্মদহাফিজ।
৩. লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)
৩৫ বছর বয়সী লাসিথ মালিঙ্গা ২০১৯ বিশ্বকাপেই অবসরের ঘোষণা দিতে পারেন। শ্রীলঙ্কান এই ফাস্ট বোলার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আলোচনার টেবিলে ছিলেন তার বোলিং অ্যাকশনের জন্য।
অবশ্য তার চুলের অনন্য স্টাইলের জন্যেও অধিকাংশ সময়ই দর্শকদের আগ্রহের মূলবিন্দুতে থাকেন মালিঙ্গা। তবে তিনি নিজেকে বরাবরই চিনিয়ে এসেছেন তার বোলিং সামর্থ্য দিয়ে। শ্রীলঙ্কার হয়ে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচে ১১ উইকেট শিকার করেছেন এই গতি তারকা।

এখন পর্যন্ত ২১৩টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে বল হাতে শিকার করেছেন ৩১৮টি উইকেট। এছাড়া ৩০টি টেস্টে ১০১টি এবং ৭০টি টি টোয়েন্টিতে ৯৪টি উইকেট নিয়েছেন এই বোলার। মুম্বাই ইন্ডিয়ানস, রুহুনা রয়্যালস, মেলবোর্ন স্টারস, গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্স, সাউদার্ন এক্সপ্রেস, রংপুর রাইডার্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজি দলে খেলেছেন মালিঙ্গা।
আইপিএলের আসন্ন মৌসুমের জন্য মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের সাথে ২ কোটির রুপিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এই তারকা ক্রিকেটার। ২০১৯ বিশ্বকাপে মালিঙ্গা অবসর নিলে তার অভাব দীর্ঘদিন ভোগাতে পারে শ্রীলঙ্কাকে।
৪. শোয়েব মালিক (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের শিয়ালকোটে জন্মগ্রহণ করা শোয়েব মালিক দুর্দান্ত ব্যাটিং পারফরম্যান্স দিয়ে প্রায় দুই দশক ধরে পাকিস্তানের আস্থার প্রতিদান দিয়ে যাচ্ছেন। পাকিস্তানের জার্সি গায়ে জড়িয়ে খেলেছেন ১০৮টি টি টোয়েন্টি ম্যাচ। পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক টি টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার রেকর্ডও এই ব্যাটিং অলরাউন্ডারের দখলে।

স্বল্পদৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে মনোযোগ দেয়ার জন্য ২০১৫ সালের নভেম্বরে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন এই পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান। আসন্ন বিশ্বকাপে ওয়ানডে থেকেও অবসর নিতে পারেন।
৩৫ টেস্টের ক্যারিয়ারে মালিক ব্যাট হাতে ১৮৯৮ রানের সাথে বল হাতে পেয়েছেন ৩২ উইকেট। ২৭৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ৭২৮৪ রান করার পাশাপাশি নিয়েছেন প্রতিপক্ষের ১৫৬টি উইকেট। বর্তমানে তিনি বিপিএলের ২০১৯ মৌসুমে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস দলের হয়ে খেলছেন।
৫. মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)
সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির ওয়ানডেতে অভিষেক হয়েছিলো ২০০৪ সালে। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই অধিনায়ক অবসর নিতে পারেন ২০১৯ বিশ্বকাপেই। অনেকের মতে, ধোনিই সর্বকালের সেরা উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। রেকর্ডসংখ্যক ৩৩২টি ম্যাচে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৩৭ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান।

৫০.৩৯ গড়ে ৩৩৪ ম্যাচে করেছেন ১০,২৭৯ রান। রাঁচিতে জন্মগ্রহণ করা এই ক্রিকেটার টেস্ট থেকে অবসর নেন ২০১৪ সালে।
অস্ট্রেলিয়ার সাথে সর্বশেষ দুইটি ওয়ানডেতে টানা দু’টি অর্ধশতক করেছেন এই ব্যাটসম্যান।আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন ধোনি। আসন্ন বিশ্বকাপে ধোনির অবসর বহুদিন কাঁদাবে ভারতীয় সমর্থকদের।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ এর এপস ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন
